;
;
;;
পরিচালক আজিজুর রহমান
প্রযোজক বমলা সাহা
রচয়িতা আজিজুর রহমান
অভিনেতা রাজ্জাক
শাবানা
সুজাতা
শওকত আকবর
খান আতাউর রহমান
সুমন
এ টি এম শামসুজ্জামান
রবিউল
শর্ব্বরী
সুরকার সত্য সাহা
চিত্রগ্রাহক সাধন রায়
সম্পাদক নুরুন নবী
বণ্টনকারী স্বরলিপি বানীচিত্র
মুক্তি ১৯৮০


মাস্টার সুমন গিটারে সুর তুলে তার রুমে বসে একটি গান গাইতে থাকে। সুমনের মা গানটি শুনে পাশের রুম থেকে উঠে এসে সুমনের রুমে আসে। কখন এলে মা ? এইতো, তোর গান শুনছিলাম। গানটাতো ভারি মিস্টি। আরেকবার গা না । সত্যিই, আরে এই গানটাইতো আমি আমাদের স্কুলের ফাংশানে গাইবো।
একদিন ছুটি হবে,
অনেক দূরে যাবো,
নীল আকাশে, সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাবো।
হৈ .. একদিন ছুটি হবে,
অনেক দূরে যাবো, নীল আকাশে সবুজ ঘাসে
খুঁশিতে হারাবো।
যেখানে থাকবে না কোনো বাধন, থাকবে না নিয়মের শাসন
পাখি হয়ে উড়বো, ফুল হয়ে ফুটবো
পাতায় পাতায় শিশির হয়ে………….
একদিন ছুটি হবে
অজানা পথে অচিন দেশে
ঝরনা ধারা হয়ে যাবো ভেসে
হো….হো…
তারা হয়ে উঠবো, মেঘ হয়ে ভাসবো
লুকোচুরি খেলার ছলে লুকিয়ে রবো।
একদিন ছুটি হবে,
অনেক দূরে যাবো,
নীল আকাশে, সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাবো।



আজিজুর রহমান পরিচালিত ছুটির ঘন্টা (১৯৮০) ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ছবিটি দেখলে দর্শক আপনি ফিরে যাবেন কিংবা আপনার স্কুল বেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে। কতো দুরন্তপনা ছিল সে দিনগুলোতে, বার বার ফিরে ফিরে যেতে মন চায়। আমার জীবনে এ ছবিটির কিছুটা হলেও প্রভাব আছে। কারণ অতি দুরুন্তপনার জন্য ছোটবেলায় আমার খুব নাম ডাক ছিল। ধরুন যতো প্রকার গাছ আছে যেমনঃ নারিকেল, সুপারি, গাব গাছ, তাল গাছ, পেয়ারা গাছ সব গাছেই আমি উঠতে পারতাম। গাছে গাছে আমার বিচরন আমার বাবা মাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল কারণ এই ছেলেকে দিয়ে আর যা কিছুই হোক পড়ালেখা হবে না এই ভাবনায়। শুধুই কী গাছে গাছে ওঠা, স্কুল পালিয়ে মাছ ধরা, ঘুড়ি উড়ানো, ভোটের সময় মারামারি করা এইসব ক্ষেত্রে আমাদের পরিবারে আমার একটা ভাল অবস্থান ছিলো। সবার প্রশংসা না হোক দূর্নামটা আমার ভাগ্যে জুটতো। আর সেজন্যই আমার ঠিকানা হলো বড় আপার বাসায়। আর সেখান থেকেই আজকের আমি।
ছুটির দিনে (১৯৮০) ছবিটি দেখতে বসে আজ বার বার সেসব কথা মনে পড়ছে। সম্প্রতি বিশ্ব চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ক্যাটাগরীর সেরা কিছু চলচ্চিত্র নিয়ে যখন রিভিউ লিখছিলাম তখন অনেক পাঠক আমাকে অনুরোধ করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা ছবিগুলো নিয়ে কিছু লিখতে। পাঠকদের অনুরোধ রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে লেখার এই চেষ্টা। কারণ এই বাংলাদেশেও ভাল চলচ্চিত্র তৈরী হয়েছে এবং হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের চলচ্চিত্রগুলো পারবে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সাদা পর্দায় বিপ্লব ঘটাতে। সেদিন খুব বেশী দুরে নেই বরং কাছেই। হয়তো একদিন সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই বিবিসিতে শুনবেন বাংলাদেশের একটি ছবি এবার ১০টি ক্যাটাগরীতে অস্কার পেয়েছে।

১৯৮০ সালে যখন ছুটির দিনে ছবিটি মুক্তি পায় তখন সারাদেশে এই ছবিটি নিয়ে ভীষন সাড়া পড়ে যায় বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া মা-বাবা তাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল থেকে দেরি করে ফিরলেই টেনশন করতো কারণ ছেলেটি কিংবা মেয়েটি ঠিকভাবে বাসায় ফিরে আসতে পারবে তো নাকি আবার ছুটির ঘন্টার মতো অবস্থা হবে ?? সারাদেশে বিশেষ করে বাবা-মাদের কাছে এই ছবিটি বিপুল গ্রহনযোগ্যতা পায়। এই ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাস্টার সুমন যার অভিনয় ছুটির ঘন্টা ছবির সবার অভিনয়কে ছাড়িয়ে যায়। আর গান সেতো এক কথায় অপূর্ব । কারণ এই ছবিটিতে গানটি না থাকলে হয়তো ছবিটি ভৌতিক বা হরোর ছবির মতো মনে হতে পারতো। কিন্তু একদিন ছুটি হবে গানটি ছুটির ঘন্টা ছবির শিল্পগুনকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিচালক আজিজুর রহমান নিজেই এই ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন। ছুটির ঘন্টা ছবির চিত্রনাট্য এককথায় অসাধারন। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সত্য সাহা।
কাহিনী:
বিধবা মায়ের (নায়িকা সুজাতা) আদরের ছেলে খোকন (মাস্টার সুমন)। খোকনকে নিয়েই সুজাতার সংসার। নীলগিরি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র খোকন। পড়ালেখা, গান বাজনা, খেলাধুলা সবকিছুতেই খোকন স্কুলের সেরা ছাত্র। এছাড়া সেই স্কুলের দপ্তরী আববাস মিয়া (রাজ্জাক), সুইপার আঙুরী (শাবানা) এবং আচার বিক্রেতা সুরত আলী (রবিউল) সবারই প্রিয় ছাত্র সে। স্কুলের দপ্তরী আববাস আলী খোকনকে খুবই স্নেহ করে। সময়ের পালাক্রমে স্কুলে কোরবানীর ঈদের ছুটি ঘোষনা হবে। ঈদে নান বাড়ি যাবে খোকন আর সেজন্য খোকনের নানা শওকত আকবরের বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা। স্কুলের ছুটি ১১ দিনের জন্য ঘোষনা হয়। স্কুল ছুটি হয়ে যায়। খোকন সহ সব ছাত্র-ছাত্রী স্কুল ত্যাগ করে। মূহুর্ত্বের মধ্যে স্কুল খালি হয়ে যায়।


কিন্তু হঠাৎ খোকনের বাথরুমে যাবার প্রয়োজন হয়। খোকন বন্ধুদের ত্যাগ করে স্কুলের বাথরুমে যায়। এদিকে স্কুলের দপ্তরী আববাস মিয়া স্কুলের দরজা জানালা বন্দ করতে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই খোকন স্কুলের বাথরুমে আটকা পড়ে যায়। খোকন বের হওয়ার চেষ্টা করে, চিৎকার করে কিন্তু কেউ শোনে না খোকনের চিৎকার। কিন্তু খোকন শুনতে পায় তার হারানোর সংবাদ। মাইকে প্রচার হতে থাকে। বাথরুমে কাগজ, পানি খেয়ে দিনরাত কেটে যায় খোকনের। কিন্তু খোকনের মা পাগলপ্রায় কোথায় আমার খোকন, কোথায় আমার খোকন ? কিন্তু খোকন খোকনের মায়ের চিৎকার শুনলেও খোকনের চিৎকার কেউ শোনে না। খোকনের শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হতে থাকে। ছবিটি এগিয়ে যায় পরিনতির দিকে……। করুন সুরে বাজতে থাকে সেই গান – একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাবো, নীল আকাশে, সবুজ ঘাসে খুশিতে হারাবো। স্কুল ছুটি হলেও খোকনের আর নানা বাড়ি যাওয়া হয় না কারন খোকনের স্বপ্নগুলো চার দেয়ালে বন্দি হয়ে অন্য জগতে ফিরে যেতে চায়। যে জগত থেকে আর ফিরে আসা যায় না।
সবার জীবনেই স্বপ্ন থাকে। জীবন চলতে চলতে অনেক স্বপ্ন বাসা বাধে এবং ভিড় করে মনে। কিছু স্বপ্ন আমাদের বেচে থাকার প্রেরণা দেয় আর কিছু স্বপ্নের মাঝে আমরা বন্দি হয়ে যাই, জীবন থেমে যায়, বলে দেয় বুকের ভেতরে টিক টিক করে, সময় হয়ে গেছে। এবার চলে যেতে হবে। তারপর জীবনের শেষ ঘন্টা বেজে ওঠে। জীবনও হারিয়ে যায় …… শুধু থেকে যায় কিছু স্মৃতি। এভাবেই শেষ হয় ছুটির ঘন্টা ছবিটি।

একনজরে, ছুটির ঘন্টা (১৯৮০)
পরিচালকঃ আজিজুর রহমান
অভিনয়ে,
খোকনঃ মাস্টার সুমন
আববাস মিয়াঃ নায়ক রাজ রাজ্জাক
আঙ্গুরীঃ শাবানা
খোকনের মাঃ সুজাতা
এবং খোকনের নানা শওকত জামিল।
ছবিটি পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে পুরুস্কার পায়।
 Download Link

1 মন্তব্য(গুলি):

  1. বন্ধুরা আমি আজ একটা সফটওয়ার এর সাথে পরিচয় করে দিচ্ছি এই সফটওয়ার দিয়ে আপনি বিশ্বের যে কোন মুভি এবং টিভি অনুষ্ঠান খুব সহজে ডাওনলোড দিতে পারবেন এবং ফ্রিতে দেখতে পারবেন।
    সফটওয়ার টির নাম graboid এটি মাত্র ১.৫ মেগাবাইট। এটি ডাওনলোড দিয়ে আপনাকে একটা একাউন্ট খুলতে হবে এবং ইমেইলে গিয়ে একাউন্ট কমফ্রাম করতে হবে ।তার পরে আপনি নিজের ইচ্ছে মত ব্যাবহার করতে পারবেন।

    grabodi সফটওয়ারটির ডাওনলোড লিংক : Download

    উত্তরমুছুন

 
Top