শ্যামল ছায়া ( Shyamol Chhaya - Green Shadow) ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রের পরিচালক হলেন হুমায়ূন আহমেদ। এই ছবিটি ২০০৬ সালে "সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র" বিভাগে একাডেমি পুরস্কার এর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ছবির বিশেষত্ব হচ্ছে, সরাসরি যুদ্ধের দৃশ্য না দেখিয়েও এতে যুদ্ধের আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
 l
পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ
প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর
ইবনে হাসান খান (ইমপ্রেস টেলিফিল্ম)
রচয়িতা হুমায়ূন আহমেদ
সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টু
চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন
সম্পাদক আতিকুর রাহ্মান মল্লিক
বণ্টনকারী ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
মুক্তি নভেম্বর ২০০৪
দৈর্ঘ্য ১১০ মিনিট
দেশ  বাংলাদেশ
ভাষা বাংলা ভাষা
মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র “শ্যামল ছায়া” । তার নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন “শ্যমল ছায়া” চলচ্চিত্রটি । যেখানে চলচ্চিত্রের ভাষায় তিনি তুলে ধরেছেন ১৯৭১ সালের কিছু মুক্তিকামী মানুষের কথা ও চেতনা , তাদের মর্মস্পর্শী জীবনকাহিনী, তাদের আনন্দ-বেদনা,হাসি-কান্না , দুঃখবোধ এবং আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস । চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালে "সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র" বিভাগে একাডেমি পুরস্কার এর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ।

সময়টা ১৯৭১ সাল , ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর । গুলির সাথে লাশ পড়ছে চারিদিকে। দিগ্বিদিক মানুষ ছুটছে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । কিন্তু কোথাও একটা নিরাপদ আশ্রয়ের দেখা নেই । আজ এখানেতো মানুষ কাল আরেক জায়গায় । ঠিকানাবিহীন এক গন্তব্যের উদ্দ্যেশে ছুটে চলছে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে মহিলা ,শিশু , যুবক , তরুণ সকলে । শুধু খোঁজ একটা নিরাপদ আশ্রয় আর বেঁচে থাকা । অপরদিকে আরেকদল মুক্তিকামী লোক নেমেছে নিজেদের মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে ।তার জন্যে হাতে তুলে নিয়েছে তারা অস্ত্র । সেই মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের দলে আছে কৃষক,শ্রমিক, ছাত্র , সাধারণ মানুষ । কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ কি পাবে এই মানুষগুলো ? যেখানে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনী । তবুও মুক্তিকামী সেই মানুষগুলোর অদম্য আশা স্বাধীনতার স্বপ্নকে সত্য করতে ।


একদল মানুষ ছুটে চলছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । নৌকায় করে তারা যাচ্ছে মুক্তাঞ্চলের খোঁজে । এক ঠিকানাবিহীন গন্তব্যে তাদের ছোটা , যেখানে তারা কিছুক্ষণ পরও বেঁচে থাকবে কিনা তার অনিশ্চিত সম্ভাবনা । তবু মানুষগুলো নৌকায় করে যাচ্ছে যুদ্ধময় সময়টা পাড়ি দিয়ে । তারা খুঁজছে একটু মুক্তির আলো , যেখানে একদণ্ড নিঃশ্বাস নিতে পারবে তারা প্রাণভরে । হিন্দু-মুসলমান বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একই নৌকার যাত্রী । সবার চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন , মুক্তির আশা । কিন্তু ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলোও সম্মুখীন হয় হানাদারদের কবলে । আবার সেই নৌকাতেই যাত্রী হয়ে আসে একদল মুক্তিযোদ্ধা । যাদের একটাই অঙ্গীকার । যেকোন মূল্যে তারা তাদের জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত করবে । আর তার জন্যে তারা গায়েন দলের বেশ ধরে । একসময় সেই নৌকার সাধারণ মানুষগুলোও জড়িয়ে যায় এই গায়েন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে যুদ্ধে । যেখানে যুদ্ধের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল মানুষগুলো , সেখানে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সেই নিরীহ মানুষগুলোর কেউ কেউ নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসে । আসলে মুক্তিযুদ্ধ যেমন একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছিল আমাদের , ঠিক তেমনি কেড়ে নিয়েছে অনেক মানুষের প্রাণ ।


চলচ্চিত্রে সেই নৌকা কিংবা নৌকার মানুষগুলোর মাধ্যমে যেন মুক্তিযুদ্ধের এক প্রতীকী দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে । যেখানে কাল , ধর্ম , মানুষের চিন্তা সবকিছু এক কাতারে দাঁড়িয়ে গেছে । যেখানে মানুষগুলো ভিন্ন ধর্মের হয়েও একই আত্নার হয়ে গেছে । যেন অনেকদিনের পরিচিত কোন আত্নীয় । যেখানে মৌলোভী রিয়াজও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। আর হিন্দু রমণী জড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে । ১১০ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ , সময়কে তুলে ধরে দারুণভাবে ফ্রেমে বন্দী করেছেন ছবির পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ । যুদ্ধের করুণতম মর্মস্পর্শী সময়েকে যেন দারুণভাবে জানান দিয়েছে ছবির প্রতিটি মুহূর্ত ।



Full HD Shyamol Chhaya 

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top